আমার সম্পর্কে

আমার ফটো
House: 14, Road: 15, Rupnagar R/A, Mirpur, Dhaka - 1216, Dhaka-1216, Bangladesh
আমাদের লক্ষ্য হলো প্রযুক্তিকে সুক্ষভাবে সংযুক্ত করে আরাম, সুরক্ষা এবং বিনোদনের মাধ্যমে আপনার জীবনযাত্রাকে উন্নত করা।

বজ্রপাতের আদ্যোপাদ্য

প্রকৃতিক ঘটনাগুলোর মধ্যে বজ্রপাত খুব পরিচিত, সুন্দর, রহস্যময় এবং একই সাথে আতঙ্কের। বজ্রপাতের এই ভয়ঙ্কর সৌন্দর্যের সাথে সাথে আমাদের মনে বিজ্ঞানের আরেকটি চিরন্তন রহস্যের জন্ম দেয়, বজ্রপাতের কারণ কি? ছোটবেলায় এই প্রশ্নের কারণ খুঁজতে গিয়ে আমরা বেশির ভাগ সময় এ উত্তর পেয়েছি, মেঘে মেঘে সংঘর্ষের ফলাফল হলো এই বজ্রপাত।

Thunder is in Slow Motion

বজ্রপাত সংক্রান্ত যে প্রশ্ন আমাদের মাথায় ঘুরপাক খায়

(১) কেন বজ্রপাত হয়?
(২) বজ্রপাতের সময় বিদ্যুৎ চমকায় কেন?
(৩) বজ্রপাতের সময় শব্দ উৎপন্ন হয় কেন?
(৪) বজ্রপাতের সময় কি পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়?
() বজ্রবিদ্যুত ঊর্ধ্বমুখী না হয়ে নিচে/ভূপৃষ্ঠের দিকে ধাবমান হয় কেন?


বজ্রপাতের কারণঃ

পানিচক্রের নিয়মে জলাধারের পানি বাষ্পীভূত হয়ে মেঘ আকারে আকাশে আশ্রয় নেয়। এই মেঘ-ই হল বজ্রপাতের ব্যাটারি। বজ্রপাতের জন্য দায়ী মেঘ বৈদ্যুতিক চার্জের আধারের মত আচরণ কর। যার উপরের অংশ পজিটিভ এবং নিচের অংশ নেগেটিভ চার্জে চার্জিত থাকে। মেঘ কিভাবে চার্জিত হয় তা নিয়ে বিজ্ঞানী মহলে বেশ মতভেদ থাকলেও সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত মতবাদ হচ্ছে, পানিচক্রে জলকণা যখন ক্রমশ উর্ধ্বাকাশে উঠতে থাকে তখন তারা মেঘের নিচের দিকের বেশি ঘনীভূত বৃষ্টি বা তুষার কণার সাথে সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়।

যার ফলে উপরের দিকে উঠতে থাকা অনেক বাষ্প কণা বেশ কিছু ইলেকট্রন হারায়। এই মুক্ত ইলেকট্রন গুলো মেঘের তলদেশে জমা হয় এবং ইলেকট্রন হারানো পজিটিভ চার্জিত বাষ্পকণা মেঘের একেবারে উপরপৃষ্ঠে চলে যায়। যার ফলশ্রুতিতে মেঘগুলো শক্তিশালী ধারক বা ক্যাপাসিটর এর বৈশিষ্ট্য লাভ করে। মেঘের দুই স্তরে চার্জ তারতম্যের কারণে সেখানে শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের শক্তি মেঘে সঞ্চিত চার্জের পরিমাণের উপর নির্ভর করে।

এভাবে বাষ্পকণা ও মেঘে সংঘর্ষ চলতে চলতে মেঘের উপরে এবং নিচে যথাক্রমে পজিটিভ ও নেগেটিভ চার্জের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে এতটাই শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরী করে যে তার বিকর্ষণে পৃথিবীপৃষ্ঠে অবস্থানরত ইলেকট্রন গুলো ভূপৃষ্ঠের আরো গভীরে চলে যায়। ফলাফলস্বরূপ ওই নির্দিষ্ট এলাকার ভূপৃষ্ঠ শক্তিশালী পজিটিভ বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে পরিণত হয়। এখন বজ্রপাতের জন্য শুধু যা প্রয়োজন তা হল বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য সামান্য একটু বাহক বা কন্ডাক্টর। কিন্তু আমরা জানি বাতাস বিদ্যুৎ অপরিবাহী, তাহলে বজ্রপাত কিভাবে হবে ?

বজ্রপাত যেভাবে হয়ঃ

মেঘের বিপুল শক্তিশালী বিদ্যুতক্ষেত্র তার চারপাশের বাতাসের অপরিবাহী ধর্মকে নষ্ট করে দেয়। যাকে বলে Dielectric Breakdown। মেঘে অবস্থিত বিদ্যুতক্ষেত্র যখন যথেষ্ঠ শক্তিশালী হয় (প্রতি ইঞ্চিতে প্রায় ১০,০০০ ভোল্ট), তখন তার আশেপাশের বাতাস পজিটিভ এবং নেগেটিভ চার্জে বিভক্ত হয়ে যায়। এই আয়নিত বাতাস প্লাজমা নামেও পরিচিত। বাতাস আয়নিত হয়ে মেঘ এবং ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বিদ্যুৎ চলাচলের পথ বা শর্ট সার্কিট তৈরী করে দেয় এবং বজ্রপাত ঘটায়।

সব উত্তর পাওয়া কিন্তু এখনও শেষ হয়নি। তাহলে বজ্রপাতের স্ফুলিঙ্গ কোথা থেকে আসে ? এখানে আমরা পাঠ্যপুস্তকের জারন-বিজারন প্রক্রিয়ার ধারণা ব্যবহার করব। কোনো ধাতুর সাথে অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় ইলেকট্রন নিষ্কাশনের প্রক্রিয়াই হল জারন। আয়নিত বাতাস বা প্লাজমা পরিবাহী হওয়ার কারণে এতে ধাতব বৈশিষ্ট্য প্রবলভাবে বিদ্যমান। তাই বাতাসের অক্সিজেনের সাথে প্লাজমার বিক্রিয়ায় বজ্রপাতের স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়। এটাকে চাইলে আপনি প্রকৃতির welding ও বলতে পারেন।

বজ্রপাতের সময় বিদ্যুৎ চমকায় কেন?

বজ্রপাতের সময় বাতাসের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। আমরা জানি বাতাস বিদ্যুৎ অপরিবাহী। কিন্তু মেঘে জমা হওয়া স্থির বিদ্যুৎ এত উচ্চ বিভব শক্তি (১০ মিলিয়ন ভোল্ট পর্যন্ত) উৎপন্ন করে যে, তা বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার জন্য বাতাসের একটা সরু চ্যানেলকে আয়নিত করে পরিবাহী পথ (conductive path) তৈরি করা হয়। আয়নিত পরমাণু থেকে বিকীর্ণ শক্তি তিব্র আলোক ছটা তৈরি হয়।

বজ্রপাতের সময় শব্দ উৎপন্ন হয় কেন?

Discharge হওয়ার সময় বাতাসের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, একে বলা হয় air breakdown। এ সময় বাতাসের যে চ্যানেলের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তার তাপমাত্রা প্রায় ২৭০০০ ডিগ্রি সেঃ (যা সূর্যের তাপমাত্রা থেকে বেশি) এ উন্নীত হয় এবং বাতাসের চাপ স্বাভাবিক চাপ থেকে ১০ থেকে ১০০ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। এ চাপ এবং তাপমাত্রায় পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র এক সেকেন্ডের কয়েক হাজার ভাগের এক ভাগ। এত কম সময়ে তাপমাত্রা ও চাপের এত ব্যাপক পরিবর্তন চারপাশের বায়ুমণ্ডলকে প্রচণ্ড গতিতে (বিস্ফোরণের মত) সম্প্রসারিত করে। এ সময় যে শব্দ তরঙ্গ উৎপন্ন হয় সেটাই আমরা শুনতে পাই।

বজ্রপাতের সময় কি পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়?

ভূমি থেকে ৩ মাইল দূরত্বের বজ্রপাত (lightning strike) গড়ে এক বিলিয়ন থেকে ১০ বিলিয়ন জুল শক্তি উৎপন্ন করে। একটি ১০০ ওয়াট বাল্ব ১ সেকেন্ড জ্বালাতে শক্তি খরচ হয় ১০০ জুল। সে হিসাবে, ১০ বিলিয়ন জুল শক্তি দিয়ে ওই বাল্বকে ১১৬০ দিন বা প্রায় ৩৯ মাস অবিরাম জ্বালানো যাবে। বৈদ্যুতিক শক্তি পরিমাপক একক “কিলোওয়াট-আওয়ার” হিসেবে এ শক্তি ২৭,৮৪০ কিলোওয়াট-আওয়ার। বাংলাদেশে একটি পরিবার গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ১০০- ১৫০ ইউনিট (কিলোওয়াট-আওয়ার) বিদ্যুৎ ব্যাবহার করে। তার মানে একটি বজ্রপাতের বিদ্যুৎ শক্তি জমা করতে পারলে একটি পরিবার ১৮৫ মাস বা, প্রায় ১৫ বছর বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ ব্যাবহার করতে পারবেন।

চাইলে আপনিও বজ্রপাতকে ট্র্যাপে ফেলে বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ ব্যাবহারের সুযোগ লুফে নিতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে বজ্রপাত ঘায়েল করতে আপনি সময় পাবেন এক সেকেন্ডেরও কম (কারণ বজ্রপাতের পুরো প্রক্রিয়াটি ঘটে এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে)।
থেমে নেই বিজ্ঞানীরা। বজ্রপাত থেকে উৎপন্ন বিপুল পরিমাণ তড়িৎ শক্তিকে ধারণ করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের বিষয়ে বিজ্ঞানীরা উৎসাহী হয়ে উঠেছেন এবং তা বাস্তবায়িত করে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বজ্রবিদ্যুত ঊর্ধ্বমুখী না হয়ে নিচে/ভূপৃষ্ঠের দিকে ধাবমান হয় কেন?

আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ৪টি স্তরের মধ্যে সবার নিচের স্তর অর্থাৎ ট্রপোস্ফিয়ারেই (ভূপৃষ্ট থেকে ১৫km উচ্চতা পর্যন্ত) বজ্রবিদ্যুৎ সৃষ্টি হয়।

এই ট্রপোস্ফিয়ারের তাপমাত্রা উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে কমতে থাকে (প্রতি কিলোমিটার উচ্চতায় তাপমাত্রা ৭°C হারে হ্রাস পেয়ে ১২ km উচ্চতায় –৫৫°C হয়)

ফলে,

অনেক সময় দেখা যায়, নীচের দিক থেকে উপরের দিকে মেঘের প্রবাহ হয়। এ ধরনের মেঘকে থান্ডার ক্লাউড বলে। অন্যান্য মেঘের মত এ মেঘেও ছোট ছোট পানির কনা থাকে।এই মেঘ উপরের দিকে উঠতে উঠতে এতে বিদ্যমান পানির কণার পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।

এ ভাবে বৃদ্ধি পেতে পেতে পানির পরিমান যখন ৫ মিঃমিঃ এর বেশী হয়, তখন পানির অণুগুলো তাদের মধ্যকার যে বন্ধন তা ধরে রাখতে পারে না। ফলে এরা আলাদা হতে শুরু করে। ফলে সেখানে বৈদ্যুতিক আধানের সৃষ্টি হয়।

এই বৈদ্যুতিক আধানের পরিমাণ দ্রুত বাড়তে থাকে। ফলে উপরের দিকে (ট্রপোস্ফিয়ারের উপরের অংশে) আধান বেশি এবং নিচের দিকে (ট্রপোস্ফিয়ারের নিচের অংশে বা ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন অংশে) আধান কম হওয়ার কারণে এই দুই অংশে বিভব পার্থক্যের সৃষ্টি হয়।

এরকম বিভব পার্থক্যের কারনেই ওপর হতে নিচের দিকে বা ভূপৃষ্ঠের দিকে বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমন হয়। তাই বজ্রবিদ্যুৎ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

কারণ,

আমরা জানি, আধান সবসময় বেশি বিভবের অঞ্চল থেকে কম বিভবের অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয়। এই আধানের নির্গমনের কারণেই আমরা আলোর ঝলকানি বা বজ্রবিদ্যুৎ দেখতে পাই।

আর এ প্রক্রিয়ার সময় উক্ত এলাকার বাতাসের প্রসারণ এবং সংকোচণ খুবই দ্রুত হয়। ফলে আমরা বিকট শব্দ শুনতে পাই।

এখন যদি আধানের পরিমাণ খুব বেশি হয় তাহলে সেই আধান ভূপৃষ্ঠে চলে আসে। ফলে বজ্রপাত হয়। আর আধানের পরিমাণ কম হলে আধানের বিনিময় কেবল দুটি মেঘের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।

1 টি মন্তব্য:

Thanks for reading!
Share this post with your friends and family.
Please post your valuable feedback in comment section.

Blogger দ্বারা পরিচালিত.